ধ'' র্ষ' ণ নিয়ে যা বললেন মিজানুর রহমান আজহারী
ধ'' র্ষ' ণবিরোধী আ'ন্দোলনে জেগে উঠেছে বাংলাদেশ। বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ সোচ্চার হয়েছেন ধ'' র্ষ' ণবিরোধী আ'ন্দোলনে। সিনেমা নাট'কের তারকারা যেমন সচেতন হয়েছেন তেমনি সচেতন হয়েছেন ধ'র্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিত্বকারীরাও। জনপ্রিয় ইস'লামি বক্তা মিজানুর রহমান আজহারী সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ধ'' র্ষ' ণবিরোধী একটি স্ট্যাটাস লিখেছেন। এই স্ট্যাটাসটি ১১ সেপ্টেম্বর তিনি তার পেজ থেকে শেয়ার করেন। স্ট্যাটাসটিতে ১ লাখ ৮৪ হাজার রিঅ্যাকশন এবং ১৩ হাজার কমেন্ট রয়েছে। পোস্টটি শেয়ার হয়েছে ১৯ হাজার বার। পাঠকদের জন্য আ'লোচিত এই স্ট্যাটাসটি তুলে ধ'রা হলো।
ধ'' র্ষ' ণ বিস্তারে দিশেহারা জাতি: সমাধান কী'?
বাংলাদেশে প্রায় প্রতিদিন কোথাও না কোথাও ধ'' র্ষ' ণ হচ্ছে। নারীকে বিবস্ত্র করা হচ্ছে। এই দৃশ্য ধারণ করে অনলাইনে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। এই বর্বরতা সহ্যক্ষমতার বাইরে। কী' একটা অ'সুস্থ প্রজন্ম গড়ে উঠেছে এ দেশে! আমাদের পরিবারগুলোতে এভাবে ধ'র্ষ'ক গড়ে উঠল আর আম'রা কেউ টেরই পেলাম না। ভাবতেই গা শিউরে উঠছে। সাধারণ জনগণ না পারছে কইতে, না পারছে সইতে। বিচার চেয়ে মানববন্ধন করতে গেলে সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাধা। এভাবে বিচার চাইতে চাইতে ক্লান্ত জনগণ যখন বিচার করার দায়িত্ব নিজ হাতে তুলে নেবে তখন পরিস্থিতি আরও ভ'য়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। তাই ধ'' র্ষ' ণের নজিরবিহীন শা'স্তি নিশ্চিত হোক— এটাই আজ গণমানুষের দাবি।
ধ'' র্ষ' ণ হচ্ছে একটি সেক্সুয়াল ক্রা'ইম বা সেক্সুয়াল ভায়োলেন্স। আদতে ধ'' র্ষ' ণ কোনো যৌ'নতা নয়, এটা পুরুষের ক্ষমতার অ'পব্যবহার। আর ক্ষমতার ছায়াতলেই মূলত বেড়ে ওঠে ধ'র্ষ'করা। সাধারণত, মানুষ যেটা দেখে দেখে শিখে সেটা সে নিজে ট্রাই করে দেখতে চায়। সিনেমাতে পরিবারের সবাই মিলে ধ'' র্ষ' ণের দৃশ্য উপভোগ করা সমাজে এর চেয়ে ভালো কিছু হওয়ার তো কথা ছিল না। যা হওয়ার তাই তো হচ্ছে। উঠতি তরুণ বয়সে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ক্ষমতার স্বাদ পেলে— সে ক্ষমতা কে না খাটাতে চায়? দেশের আইন ও বিচারব্যবস্থা যখন ক্রিমিনাল ফ্রেন্ডলি হয়ে উঠে মূলত তখন অনিয়ন্ত্রিত ও মাত্রাতিরিক্ত উগ্র ক্ষমতার জো'রেই এরা ধ'' র্ষ' ণের সাহস করে। ক্ষমতার বলে ও আইনের ফাঁকফোকর মাড়িয়ে এরা সবসময় থাকে ধ'রাছোঁয়ার আড়ালে।
বাংলাদেশের আবহাওয়া ও পরিবেশে একটি ছে'লে অথবা মে'য়ে গড়ে ১৪-১৫ বছর বয়সেই পরিপূর্ণ সেক্সুয়াল অ্যাবিলিটি লাভ করে থাকে। কিন্তু তারা বিয়ের পিঁড়িতে বসে আরও ১০-১৫ বছর পর। এই লম্বা সময় ধরে যৌ'ন ক্ষুধা নিবারণের কোনো বৈধ সুযোগ তাদের হাতে নেই। উপরন্তু বিয়ের প্রশ্ন উঠলেই আসে সামাজিক যতো নিয়মকানুনের দোহাই।
যৌ'নশক্তি আল্লাহ তাআলার দেয়া এক অমূল্য সম্পদ। এই সেনসিটিভ এনার্জিকে যদি সঠিকভাবে ব্যবহার না করা হয় তবে এর অ'পব্যবহার হবে এটাই স্বাভাবিক। তার ওপর যদি থাকে নৈতিক অধঃপতন এবং উগ্র ক্ষমতা প্রদর্শনের সুযোগ তাহলে তো ধ'' র্ষ' ণ ঠেকানোর আর কোনো রাস্তাই খোলা নেই।
এ দেশে প্রাপ্তবয়স্ক ছে'লেরা বেশির ভাগ সময় সেক্সুয়ালি ওভা'র চার্জড হয়ে থাকে। বিজ্ঞাপনে আর বিলবোর্ডে সর্বদা শোভা পাচ্ছে স্বল্প বসনা নারী যেখানে তার দেহের আকর্ষণীয় সব উঁচুনিচু ভাঁজগুলো প্রেজেন্ট করা হচ্ছে, ক্রিকেট খেলার মাঝখানে চিয়ার্সগার্লসদের বেলি ড্যান্স, মোবাইল ফোনে সহ'জলভ্য সেক্সুয়াল কন্টেন্ট, ওয়েব সিরিজ, প'র্নোগ্রাফি, অশ্লীল সিনেমা আরো কত কি। এগুলো তরুণদের মাঝে যৌ'ন উন্মাদনা তৈরি করছে।
নারীদেহকে যারা সেক্স অবজেক্ট হিসেবে ভোগের সস্তা পণ্য করে উপস্থাপন করে এরা সবাই মূলত ধ'র্ষ'ক। এই সেক্স অবজেক্ট দেখে দেখে তরুণরা ফুল্লি চার্জড হয়ে থাকে। কিন্তু হালাল পন্থায় এই এনার্জি রিলিজ করার কি তার কোন জায়গা আছে? না, নেই! ফলাফলস্বরূপ চলছে মাস্টারবেসন, বিবাহবহির্ভূত শারীরিক স'ম্পর্ক, আর ক্ষমতা থাকলে বীরদর্পে ধ'' র্ষ' ণ। সংবাদমাধ্যম, গণমাধ্যম, ফেসবুকের নিউজফিডে যেন একটাই নিউজ— ধ'' র্ষ' ণ! ধ'' র্ষ' ণ! আর ধ'' র্ষ' ণ!
প্রতিটি জাতীয় দৈনিকে যদি হ'ত্যা ও ধ'' র্ষ' ণের জন্য আলাদা একটি পাতা নির্ধারিত থাকে, ওই পাতা কোনোদিন খালি থাকবে বলে মনে হয় না। প্রতিটি জে'লায় প্রায় প্রতিদিন এজাতীয় ঘটনা ঘটছে। তাই, এই মহামা'রির প্রকোপ থেকে মুক্তি পেতে— বিয়েকে সহ'জ করুন, অশ্লীলতার সকল পথ বন্ধ করুন, উগ্র ক্ষমতার প্রয়োগ থামিয়ে দিন এবং সন্তানদের নৈতিকতা ও মানবিকতার সবক দিন।
দিনরাত তরুণসমাজকে কাছে আসার গল্প শোনাবেন, নোংরা রাজনীতির পাওয়ার গেম শেখাবেন। আর ধ'' র্ষ' ণ করলে হইচই শুরু করবেন। ওয়াট অ্যা ডাবল স্ট্যান্ডার্ড ! নাট'ক, সিনেমা, বিজ্ঞাপন, বইপুস্তক এবং ইন্টারনেট সব জায়গায় ন'গ্নতা ও যৌ'নতায় ভরপুর থাকবে, বিয়ে কঠিন হবে, ক্ষমতার রাজনৈতিক মহড়া চলতে থাকবে আর কিছু ধ'র্ষ'ককে ধরে ফাঁ'সিতে ঝুলিয়ে দিলেই ধ'' র্ষ' ণ বন্ধ হয়ে যাবে—এ ধারণা নিছক শি'শুসুলভ ধারণা বলেই আমা'র কাছে মনে হয়।
মানুষকে মানুষ বানানো এত সহ'জ কাজ নয়। আমি প্রায়ই বলে থাকি যে গরুর পেট থেকে বের হলেই সেটা গরু হয়, ছাগলের পেট থেকে বের হলেই সেটা ছাগল হয় কিন্তু মানুষের পেট থেকে বের হলেই সেটা মানুষ হয়ে যায় না বরং সেটাকে মানুষ বানাতে হয়। মানুষকে মানুষ বানানো না গেলে তার মধ্যে পশুসুলভ আচরণ ডেভেলপ করে। তখন তার মধ্যে আর মনুষ্যত্ব থাকে না। এমনকি কখনো কখনো সে পশুকেও ছাড়িয়ে যায়। আর নিবিড় পরিচর্যা, নৈতিক সুশিক্ষা এবং মানবিক মূল্যবোধের চর্চা তাকে ধীরে ধীরে আলোকিত মহামানবে পরিণত করে। তাই, মানুষকে মানুষ বানাতে দরকার নৈতিক শিক্ষা ও মানবিকতার চর্চা। পরিবারে, সমাজে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, রাষ্ট্রীয়ভাবে নৈতিক শিক্ষা ও মানবিকতার চর্চা করা খুব জরুরি।
যদি আম'রা আসলেই সমাজ থেকে ধ'' র্ষ' ণ বন্ধ করতে চাই— তাহলে আমাদের সামগ্রিক ব্যবস্থা পরিবর্তন করে অ'প'রাধ প্রবণতাবিরোধী এবং মানবতাবান্ধব একটি সমাজব্যবস্থা কায়েম করতে হবে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাও খোদাভীতি সম্পন্ন শিক্ষাব্যবস্থা হতে হবে। শুধু তাই নয়, আগে শাসকশ্রেণি ও অ'ভিভাবকদের নিজেদেরকে খোদাভীতিসম্পন্ন মানুষে পরিণত করতে হবে। তবেই কেবল সামগ্রিক ব্যবস্থার পরিবর্তন সম্ভব।
ধ'' র্ষ' ণ ঘটনার তীব্রতা বোঝাতে অনেকে লিখছেন— মধ্যযুগীয় বর্বরতাকে হার মানিয়েছে। কিন্তু মধ্যযুগীয় বর্বরতা বা আইয়্যামে জাহিলিয়াতের বর্বরতাকে কী'ভাবে সমাধান করা হয়েছিল সে বয়ান দিতে গেলে তো তখন তারা কানে কুলুপ এঁটে রাখে। আসলে, মানবজাতির স্রষ্টা মহান আল্লাহ তাআলাই ভালো জানেন যে সামাজিক ভা'রসাম্য অক্ষুণ্ণ রাখতে ব্যভিচার ও ধ'' র্ষ' ণের শা'স্তি কেমন হওয়া উচিত। তাই ইস'লামে ব্যভিচার ও ধ'' র্ষ' ণের দৃষ্টান্তমূলক শা'স্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মানবিক সমাজব্যবস্থা, উন্নত চারিত্রিক মূল্যবোধ এবং অ'প'রাধপ্রবণদের জন্য দৃষ্টান্তমূলক শা'স্তির ব্যবস্থাপণা দিয়েই মূলত রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মধ্যযুগীয় বর্বরতা বা আইয়্যামে জাহিলিয়াতের বর্বরতাকে কল্যাণে ভরপুর এক মানবিক সমাজে রূপান্তর করেছিলেন এবং এক সোনালি যুগের গোড়াপত্তন করেছিলেন। যে সমাজব্যবস্থা আজও গোটা বিশ্ববাসীর জন্য অনুসরণীয় এবং অনুকরণীয়।
ধ'' র্ষ' ণ ইস্যুতে আরেক শ্রেণি আছে মিউচুয়াল কনসেন্ট নিয়া। কনসেন্ট নিয়া স'ম্পর্ক করলে নাকি কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে এই স'ম্পর্কের অবনতি ঘটলেই ধ'' র্ষ' ণের অ'ভিযোগ ওঠে পুরুষের বি'রুদ্ধে। পুরুষরাও কম হয়'রানির শিকার হচ্ছে না। যখন ফিজিক্যাল রিলেশন হয়, তখন সেটাকে প্রে'ম ও ভালোবাসা শব্দে ব্যক্ত করা হলেও সময়ের বিবর্তনে তা ধ'' র্ষ' ণ নাম ধারণ করে। এবং পরিণামে নারী নি'র্যা'তন মা'মলাও হয়। ধ'' র্ষ' ণের ঘটনা দেশব্যাপী আ'লোচিত হওয়ার পর অনেক পুরুষকে ধ'' র্ষ' ণের অ'পবাদ দিয়ে ব্ল্যাকমেইলও করছে অনেক নারীরা, এমন খবরও উঠে এসেছে। এ জন্যই ইস'লাম বিবাহবহির্ভূত সব স'ম্পর্ককে হারাম করেছে।
সোমবার একটি ভিডিও ক্লিপে, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে কিছু তরুণীদের ধ'' র্ষ' ণবিরোধী একটি স্লোগানে মুখরিত হতে দেখলাম। স্লোগানটি ছিল এ রকম—“এই দায়-শুধু তোর-তুই ধ'র্ষ'ক”। প্রিয় বোনদের বলতে চাই— প্রকৃতপক্ষে ধ'' র্ষ' ণের জন্য অনেক ফ্যাক্টর দায়ী। শুধু একদিকে আঙুল তোলাটা ইনসাফপূর্ণ নয়। নৈতিক শিক্ষার উন্নয়ন, ক্ষমতার অ'পব্যবহার রোধ এবং আইনের শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরেও অ'প'রাধপ্রবণ, দুশ্চরিত্র, লম্পট ও বি'কৃত রুচির কিছু লোক সমাজে থাকবেই। যাদের অনিষ্ট থেকে বেঁচে থাকার জন্য আপনাদেরই সেফটি ম্যাজারমেন্ট নিতে হবে। তাই, দয়া করে ঘরের বাইরে সবসময় নিজেকে শালীন পোশাকে আবৃত রাখু'ন। মনে রাখবেন হিজাব নারীর আভিজাত্য, সৌন্দর্য, লাজুকতা ও রুচিশীলতার প্রতীক। ইস'লাম নারীকে ক'ষ্ট দেয়ার জন্য হিজাবের বিধান দেয়নি বরং দিয়েছে রক্ষাকবচ হিসেবে।
নৈতিকতার অভাব, অশ্লীলতার প্রসার, স্বাধীন বিচারব্যবস্থার অনুপস্থিতি এবং ক্ষমতার দাপট প্রদর্শনের যে অ'পসংস্কৃতি দেশে চলে এসেছে তাতে খুব সহসা এ ধ'' র্ষ' ণ মহামা'রি থামানোর কোনো সুযোগ নেই। এটা চলতে থাকবে। কিছু ঘটনা ভাই'রাল হলে আম'রা জানতে পারব আর বাকিগুলো চাপা পড়ে থাকবে।
তাই এখন থেকেই আম'রা সবাই সিরিয়াসলি সতর্ক না হলে এই ক্রাইসিস মোকাবিলা সম্ভব নয়। সর্বমহল থেকে প্রচেষ্টা চালাতে হবে। নৈতিক প্রজন্ম গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নাই। মানবিকতার চর্চা ও নৈতিকতার চর্চা ছাড়া ধ'' র্ষ' ণ ঠেকানো সম্ভব নয়। বিবেক জাগানিয়া ও মানবিক সত্তা বিকাশে সহায়ক শিক্ষাব্যবস্থা খুবই জরুরি। পারিবারিক তারবিয়াত এবং প্রতিটি মু'সলিম পরিবারে ইস'লাম চর্চা নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে আমাদের কারও আদরের ভাইটি হয়ে উঠতে পারে ধ'র্ষ'ক অথবা আমাদের আদরের বোনটি হয়ে যেতে পারে পরবর্তী ভিকটিম। তখন দিশেহারা হয়ে “বিচার চাই” “বিচার চাই” বলা ছাড়া আর কিইবা করার থাকবে?